,

ডিসির অফিসের নিচে চানাচুর ওয়ালার ওপর ক্যান্টিন মালিকের হামলা :: জোরপূর্বক ভ্যান আটক

স্টাফ রিপোর্টার : হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বারান্দার সামনে সুভাষ (৪০) নামে এক চানাচুর বিক্রেতাকে মারধোর করে গুরুতর আহত করেছে ক্যান্টিন মালিক নয়ন সরকার ও তার ভাই ভাতিজারা। শুধু তাই নয়, হামলাকারীরা দিনমুজুর ওই চানাচুর বিক্রেতার ভ্যানগাড়িটিও জোরপূর্বক নিয়ে ক্যান্টিনের সাথে তালাবদ্ধ করে রাখে। ফলে গাড়িতে থাকা খাবার সামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া হামলাকারীরা সুভাষের পকেটে থাকা চানাচুর বিক্রির প্রায় ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ক্যান্টিন মালিক নয়ন সরকার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত শাখার অফিস সহায়ক ও তার ভাই নিখিল সরকার, ভাতিজা আকাশ সরকার, জীবন সরকার, ভাগিনা জুয়েল সরকার প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ঘটনা ঘটালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিদের অবগত করা হয়েছে। পরে আহত সুভাষকে স্থানীয়রা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করান। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্টাফ, আইনজীবী ও অন্যান্যদের সুবিধার জন্য রেকর্ড রোমের সামনে একটি ক্যান্টিন ছিলো। মাঝখানে সেটি বন্ধ হয়ে গেলেও এখন আবার চালু রয়েছে। কিন্তু সদ্য বদলী হওয়া জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বদলীর আগে কার্যালয়ের বাহিরে পুকুর পাড় সংলগ্ন আরেকটি ক্যান্টিন চালু করে যান। এটি পরিচালনা করার দায়িত্ব পায় ওই অফিসেরই নেজারত শাখার অফিস সহায়ক নয়ন সরকার। সে তার ভাই ভাতিজাদের নিয়ে ক্যাণ্টিনে ব্যবসা করে আসছে। নয়ন সরকার নিজে ডিসি অফিসে চাকরি করলেও তা কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে সব সময় তাকে ওই ক্যান্টিনে বসে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা যায়।
সম্প্রতি সে ওই ক্যান্টিনের পাশের মাঠে ভ্রাম্যমাণ চানাচুর, আমড়া, কিংবা শরবত বিক্রেতাদের বসতে দিচ্ছে না। তাদের কাছে সে অবৈধভাবে মাসিক হারে টাকা দাবি করে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে তার সাথে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের ঝামেলা হয়। অনেক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা নিরূপায় হয়ে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হলে মানবিক কারণে সবদিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসক আদালতের এরিয়া নোংরা না করা ও একটি নির্দিষ্ঠ সময়ে ব্যবসা করার জন্য মৌখিকভাবে বলে দেন। কিন্তু এরপরও নয়ন সরকারের বাধার কারণে ডিসি অফিসের ভেতরে ভ্রাম্যমানভাবে কেউ কোনো কিছু বিক্রি করতে পারে না। প্রায় সময়ই সে বাধা দেয়, না হয় তাদের কাছে টাকা দাবি করে।
আহত সুভাষ জানায়, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। সে ঝাল মুড়ি, চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালায়। সম্প্রতি তার বাবা মা দুজনই মারা যায়। অনেকদিন ধরেই ডিসি অফিসের ভেতর সে এসব বিক্রি করে সংসার চালাতো। কিন্তু ডিসি অফিসের বাহিরে ক্যান্টিন হওয়ার পর থেকে সে এখানে আর যেতে পারছে না।
জেলা প্রশাসক দেবী চন্দের নিকট বিষয়টি জানালে তিনি তাকে আদালত এলাকা যাতে অপরিছন্ন না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে ব্যবসার করার মৌখিকভাবে বলে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ওই সময় সে ডিসি অফিসের ভেতরে যাওয়া মাত্রই নয়ন সরকার তার ভাই নিখিল সরকার, ভাতিজা আকাশ সরকার, জীবন সরকার ও ভাগিনা জুয়েল সরকার তার উপর হামলা চালায়। বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে সুভাষ জানায়।
উল্লেখ্য নয়ন সরকার সরকারি চাকরি করলেও ক্যান্টিন চালুর পর থেকে অফিস টাইমের বেশিরভাগ সময়ই ব্যবসা করে। এ ছাড়া ডিসি অফিসের ভবন সংলগ্ন এই ক্যান্টিন চালুর পর থেকে সে আগত বিচারপ্রার্থীসহ সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তার ক্যান্টিনে নোংরা ও অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি এবং চা, সিংগারাসহ খাবারের অতিরিক্ত দাম আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাহিরে অভিযান করে জেল জরিমানা করলেও রহস্যজনক কারণে তার ক্যান্টিনের এই বিষয়টি দেখছে না। এ ছাড়া ওই ক্যান্টিনের ময়লা আর্বজনা পাশর্^বর্তী পুকুরে পড়ায় পুকুরের পানি নষ্ট হচ্ছে। নয়ন সরকার ডিসি অফিসের ভবনের একটি রোম দখল করে সেখানে তার দোকানের জিনিসপত্র রাখছে। এ ছাড়া ক্যান্টিন সংলগ্ন আদালত থাকায় তার এখানের হৈ হুল্লোড় আর উচ্চ শব্দের কারণে বিচার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
আদালতে আসা দর্শনার্থীদের অভিযোগ : ডিসি অফিসের ভেতরে একটি ক্যান্টিন থাকাস্বত্তেও ভাষা শহীদের জন্য নির্মিত স্মৃতিসৌধের পাশে এই ক্যান্টিন চালু করায় লোকজন স্মৃতিসৌধে জুতা পায়ে উঠে এবং আড্ডা দিয়ে এর পবিত্রতা নষ্ট করছে। এর জন্য তারা এই ক্যান্টিনকেই দায়ী করেন।
এদিকে একটি সুত্র জানিয়েছে, অফিস টাইম শেষ হলেও সন্ধার পরও এটি চালু থাকে। ওই সময় কোনো ক্রেতা না থাকলেও এটির ভেতর বখাটে লোকজনের আড্ডা দিতে দেখা যায়। যারা শহরের বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, নয়ন সরকার ডিসি অফিসে চাকরি করায় সে প্রভাব খাটিয়ে চলাচল করে। আর এই সুযোগে বিভিন্ন এলাকার অপরাধীদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। যে কারণে সে অফিস ফাকি দিয়ে ব্যবসা করে। জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ জানান, বিষয়টি অমানবিক। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর